▼
Sunday, May 16, 2021
সময়ের বিবর্তনে উনিশ শতকের সবচেয়ে বড় দেশেগুলোর এখন মানচিত্রেও ঠাই নেই!
জাতিসংঘের ভূমিকা, কার্যকরিতা আর দূরদর্শীতা নিয়ে আমাদের অনেকের জ্ঞানেরই সীমাবদ্ধতা আছে। আসুন একটু বোঝার চেষ্টা করি যে, পৃথিবীতে সকল দেশই আদতে স্বাধীন-সার্বভৌম কি না, আর তা না হলে সেখানে জাতিসংঘের ভূমিকা কী!
আমি এমব কিছু দেশের কথা এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করবো যেগুলো কি না একসময় পৃথিবীর স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল, তবে বিভিন্ন কারণে কয়েকটি দেশ এই মানচিত্র থেকে সাবস্ট্র্যাক্ট হয়ে গিয়েছে।
১)তিব্বতঃতিব্বত আর চায়নার দ্বন্দ্ব বা চায়না আর দালাইলামা দ্বন্দ্ব মোটামুটি আমরা সবাই জানি।১৯১২ সাল থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত তিব্বত চায়নার বাউন্ডারির পাশে একটা দেশ হিসেবেই বিশ্বমানচিত্রে স্থান পেয়েছিল।কিন্তু ১৯৫১ সালে চায়নাই তিব্বত কে তাদের আন্ডারে নিয়ে নেয়।আর এরই প্রেক্ষাপট ধরে ১৯৫৯ সালে তিব্বতের দালাইলামার মধ্যে চাইনিজ মঙ্গোলিয়ার বিরুদ্ধে প্রোটেস্ট শুরু করে।আর প্রতিবারের মতো চায়না এটাও ধামাচাপা দিয়ে দেয়।আর এরপর চায়নিজ লিবারেশন আর্মিরা দালাইলিমার বাসার আর্টিলারি শেলের উপর ফায়ারিং করা শুরু করে দিয়েছিল।আর ওই রাতে দালাইলামা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়।আর আজ পর্যন্ত ভারতেই আছেন তিনি।এভাবে তিব্বত নামের দেশটি হারিয়ে যায় বিশ্বমানচিত্র থেকে।
২)ইউগোস্ল্যাভিয়াঃএই দেশটা অনেক পাওয়ারফুল দেশ হিসেবে সাউথইস্ট ইউরোপে জায়গা করে নিয়েছিল।আর আপনাদের মধ্যেই অনেকেই ভাবেন যে এটা একটা স্বাধীন দেশ।ব্যাপারটা এরকম একদম না।কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে এই দেশ পুরোপুরি ভাবে ধবংস হয় এবং এর স্বাধীনতাটাও চলে যায়।পরবর্তীতে এই দেশ কয়েকটা রাইবাল গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায়।আর ১৯৯০ সালে অফিশিয়ালি এই দেশটি ৭টা দেশ আর একটা শহরের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়।আর এই দেশ গুলোই হচ্ছে-ক্রোয়েশিয়া,বসনিয়া,হার্জেগোভিনা, সার্বিয়া আর স্লোভেনিয়া,বেলারুশের একটি শহর কোসাভা আর মোন্টেনেগরো।
৩)পার্সিয়াঃএটা আমার পছন্দের একটা নাম।প্রিন্স অফ পার্সিয়া আমার পছন্দের একটা গেম,এর মাধ্যমে ব্যাবিলনীয় সভ্যতার আইডিয়া পাই।।তবে এই নিয়ে সম্প্রতি ঘাটাঘাটি করে একটা তথ্য পেলাম সেটা হচ্ছে পার্সিয়া মিডিল ইস্টের একসময়ের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক সেন্টার ছিল।পার্সিয়ার ইম্পায়ারের বাউন্ডারি ছিল তুর্কির উত্তর, মিশরের পশ্চিম ও সিন্ধু নদীর(Indus) পূর্ব দিকে।আর ১৯৩৫ সালে যখন রেজা শাহ্ ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটির কাছে দরখাস্ত করেন,তখন ২২ই মার্চ ওই সালেই পার্সিয়ান ইম্পায়ারের মাঝ বরাবর যে জায়গাটা চারদিক পাহাড় দ্বারা ঘেড়াও সেটার নাম দিয়ে দেওয়া হলো ইরান।আর নতুন বর্ডার ও সংযুক্ত হলো।আর ১৯৫৯ সালে যখন মানুষজন এই দেশের নতুন নাম নিয়ে প্রতিবাদ শুরু করলো তখন এহসান ইয়ার্শতার নামক প্রফেসর এটা প্রপোজ করলেন যে এই দেশটা ইরান আর পার্সিয়া দুই নামেই যেন ডাকা হয়।তবে ওইটাই ইরান নামেই স্থায়ী হলো,কারণ পার্সিয়ান বর্ডার পুরোপুরি ব্রেক করা হয়েছিল।
৪)সিক্কিমঃসিক্কিম ভারত বর্ডারের বাইরে আলাদা একটা স্বাধীন দেশ ছিল।নামগিয়্যাল(Namgyal)নামক ডাইনিস্টি ১৬৪২ সেখানে রাজত্ব করতো ।আর এরপর ১৮৯০ সালে সিকিম ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার একটি প্রিন্সলি স্টেট হিসেবে ঘোষণা পায়।আর ১৯৫০ সালে আবার এই সিকিম স্বাধীন দেশ হয়।আর ভারতই এই দেশটাকে প্রোটেক্ট করতো যেভাবে ভূটান কে করে। কিন্তু নামগিয়্যাল ডাইনিস্টি এই দেশটা শাসন করতো।এরপর ১৯৭৩ সালে এ্যান্টি রয়ালিস্ট সিকিমের রয়্যাল প্রাসাদে গ্রেনেড এ্যাটাক করে।আর অবশেষে ১৯৭৫ সালে সর্বকালের জন্য মোনার্কি প্রথার বিলুপ্ত ঘটে আর পরবর্তীতে ভারতের ২২ তম রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়।আর এই জায়গায় ভারতীয়,নেপালি আর চাইনিজ মানুষদের একটা হাইব্রিড বলা যায়।ভূটানের সাথেও যে এরকম টা হবেনা এটা বলা নিশ্চিত না,কারণ ভূটান মোনার্কি শাসিত একটি রাষ্ট্র।
এগুলা ছাড়াও সিয়াম নামের মোনার্কি শাসিত দেশ থেকে থাইল্যান্ডের আগমন। তাছাড়াও এরকম হয়তো অনেক ঘটনা ঘটেছে যেটা হয়তো আমাদের জানা নেই।তবে আপনারা যেভাবে ইউএন কে অনেক সৎ ভাবেন যে, কোনো দেশ এর অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যা হলে ইউ এন ঝাপায় পড়বে,ওই দেশ কে জাস্টিস দিবে। এইটা কতটুকু সত্য তা এটা উপরের দেশ গুলোর তাকালেই বুঝবেন।শান্তি সংঘ শুধুমাত্র এ্যালাই রাষ্ট্র ছাড়া আর স্বার্থ ছাড়া কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যায় হস্তক্ষেপ করেনি,ইভেনইফ ওই দেশের প্যাট্রিয়োটিক স্বাধীনতা ভেস্তে গেলেও মাথা ব্যাথা ছিলনা।বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি দেখেনে,তাহলে তখন ইউএসএ সহ রাশিয়া তার সাথে আরও বড় বড় এ্যালাই রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করাতে তারা এখানে ভূমিকা রাখতে বাধ্য হয়েছিল।আসলে সবাই নিজের স্বার্থটাই মুখ্য করে দেখে।এটাই নির্মম বাস্তবতা।তাই কখনোই কাউকে না জেনে দয়া করে "দুধের ধোয়া তুলসী পাতা" বলে ট্যাগ দিতে যেয়েন না।প্রচণ্ড খারাপ লাগে বিষয় গুলা।তবে একটা পসিটিভ দিক আছে,দিন দিন হয়তো সচেতনতা ও প্রারম্ভিক বা অথোরিয়াল এর ফলে এখন জিনিস গুলো হিল হচ্ছে যেমনঃগ্রীনল্যান্ড হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার পর সবচেয়ে বড় কোনো দ্বীপ,যেটা প্রায়ই সৌদিআরবের(KSA) মতো বড়।কিন্তু গ্রীনল্যান্ড স্বাধীন কোনো দেশ না।বরং ডেনমার্কের অধীনে একটি রাজ্য যে রাজ্যটি ডেনমার্কের চেয়েও অলমোস্ট ৫০ গুণ বড়,আর ডেন মার্ক থেকে প্রায় হাজারখানেক মাইল দূরে অবস্থিত। ২০০৯ সাল পর্যন্ত তো গ্রীনল্যান্ডবাসীর অফিশিয়াল ভাষা গ্রীনল্যান্ডিং কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল পর্যায়ে কখনো কন্সিডারই হতোনা।তবে কিছু দিনের মধ্যেই এটা অফিশিয়ালি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায় আর সেল্ফরুলিং দেশ হিসেবেও মর্যাদা লাভ করে।আমরা আশা করতে পারি খুব শীঘ্রই এটা হয়তো স্বাধীন দেশ হিসেবেও একদিন স্বীকৃতি পাবে।
No comments:
Post a Comment