Saturday, May 15, 2021

করোনা ভাইরাসের অজানা ইতিহাস!

চীন কী শুধু করোনা ভাইরাসের জন্যই দায়ী?


করোনা

আউটব্রেকের পর সবার মধ্যে একটাই প্রশ্ন যে এতো এতো রোগ ছড়ানো স্বত্তেও কেন  চীনা সরকার বন্যপ্রাণী (Wild Life Farming) যেমনঃসাপ,বাদুড়,ইঁদুর,কুমির,কুকুর ইত্যাদিকে কেন বাজারেএতোদিন অব্দি(Wet Market-যেখানে এই বন্য প্রাণি বিক্রি করা হয়) বৈধ করে রেখেছিল ?আর করোনা ইন্সিডেন্ট এর পর স্থায়ী ব্যান দিয়েছে,তবে এটা কী আসলেই স্থায়ী?আপনাদের মনে অনেকগুলো প্রশ্ন মাইন্ডে আসছে নিশ্চয়ই-তার মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য প্রশ্ন হতে পারে-

১)বন্যপ্রাণী এভাবে হত্যা করার ফলে কী বাস্তুতন্ত্র (Ecosystem) নষ্ট হচ্ছে না?

২)  এটাকী মোরালি রাইট?

৩)চায়না থেকে এই বন্যপ্রাণী গুলোর মাধ্যমে অনেক রোগ জেনেরেট হওয়া স্বত্তেও  সরকারই বা কেন এই ফার্মিং 

কে প্রশ্রয় দিচ্ছে?

এই প্রশ্নের উত্তর গুলো আমি আমার ব্যাক্তিগত পর্যেষণার দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করবো।


*১নং এর উত্তর বাস্তুতন্ত্র এর ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে?

=>ইকোসিস্টেম বা বাস্তুতন্ত্র এর ডিসব্যালেন্স হলেও চীনারা তাদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দ্বারা সেই জায়গাটা থেকে মোনস্যানটো(একটি এ্যাগ্রো ক্যামিকেল কম্পানি)দ্বারা তৈরি জেনেটিকালি মোডাফাইড ক্রপ,জেনেটিক এবং ক্লোনিং করা প্রাণি উৎপাদনে সক্ষম,তাই তেমন ইফেক্ট ফেলেনা।


*২নং এটা নৈতিক ভাবে ঠিক কীনা?

উত্তর-না,অবশ্যই না।তবে একটা দেশের ক্ষেত্রে তার দেশের অর্থনৈতিক (ইকোনোমিকাল) এবং কূটনীতিক (ডিপলোমেটিকাল)লাভ সবার আগে দেখা হয়,"নৈতিকতা" বলতে কোনো শব্দ এখানে গ্রহণ যোগ্যতা পায়না সেটা ঠিকই হোক বা বেঠিক।


*৩)চীনা সরকার কেন অনুমোদন দিয়েছে?

=>আমরা দেখেছি বেশিরভাগ আলোড়ন ছড়ানো রোগ গুলোর উৎপত্তিস্থলই চায়না।কয়েকটি দেখে আসা যাক!(কিছু কথা বলে রাখা ভালো, বেশিরভাগ ভাইরাস রোগই ভিন্ন ভিন্ন প্রাণি থেকে নানা মাধ্যমে মানহদেহে সংক্রমিত হয় যেমনঃ১)পাখির থেকে যে  ভাইরাস উৎপন্ন হয় তা হচ্ছে বার্ড ফ্লু ভাইরাস।

২)শুকরের থেকে যে ভাইরাস উৎপন্ন হয়েছিল তা সোয়াইং ফ্লু ভাইরাস।

৩)এইচআইভি ভাইরাস যেটার কারণে এইডস হয় তা অরিজেনেট হয়েছিল শিম্পাঞ্জির থেকে।

৪)আফ্রিকা জুড়ে ইবোলা ভাইরাস এর উৎপত্তিও বাদুড় থেকেই তৈরী হয়েছিল।

৫)কভিড-১৯ এটাও বাদুড় থেকেই জেনেরেট হয়েছে তবে এই ভাইরাস বাদুড়ের মাধ্যমে পেংগোলিন নামক প্রাণিতে ছড়ায়,যে প্রাণিটি চায়নার একটা ডেলিকেসি,মানে জনপ্রিয় খাবার। তার মাধ্যমেই এখন এটা ইনফেক্টেড হচ্ছে। 

আর এই ভাইরাস টা তখনই ছড়ায় যখন এই প্রাণিগুলো একসাথে কোথাও ঠাই করে,ঠিক উহান এর ওয়েট মার্কেটের মতো,যেখানে এই গ্যাদারিং টা অনেক বেশি।


এখন করোনা মহামারির আগেও কয়েকবার এরকম ঘাতক রোগ সারাবিশ্বজুড়ে আলোরন ফেলেছিল।তার উল্লেখযোগ্য 

১)১৯৬৬ সালের এশিয়ান ফ্লু যে রোগ তৎকালীন সারাবিশ্বের প্রায় ১০ লক্ষ থেকে ৪০ লক্ষ পর্যন্ত জীবন কেড়ে নিয়েছিল।এই রোগের উৎপত্তিস্থলও চায়না।

২)আবার চায়না থেকে উৎপন্নই বার্ড ফ্লু ঠিক এশিয়ান ফ্লু এর ১০ বছর পর অর্থাৎ  ১৯৭৬ সালে সারাবিশ্বে আনুমানিক ১০ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়।

৩)২০০২ এ সার্স(SARS) যেটা প্রায় ৭৫০ লোকের জীবন কেড়ে নেয় এবং এটাও চায়না থেকেই উদ্ভব।

৪)২০১৯  সালের শেষের দিক করোনা ভাইরাস থেকে তৈরী কভিড-19 যেটা বিশ্বের ১৮৬ টা দেশে অলমস্ট ত্রিশ হাজার মানুষের এখন পর্যন্ত প্রাণ কেড়ে নিয়েছে(২৯/০৩/২০২০)পর্যন্ত,যা এখনি বিশ্বে সবচেয়ে ইনফেকশিয়াস ভাইরাসের কাতারে প্রথম।এটার উৎপত্তিস্থলও চায়না।

 


তবে চায়না এরকম কেন করছে?সরকার অনুমোদন দিচ্ছে কেন?আগে থেকেই কী এমন টা ছিল?মানুষজনই কেন আকর্ষিত হচ্ছে?

=>এই উত্তরগুলি জানার জন্য আমাদের চায়নার প্রেক্ষাপট এবং ইতিহাস জানতে হবে।তাহলেই আমার মনে হয় উত্তর গুলো পেয়ে যাবো।

প্রেক্ষাপট:১৯৫৯ সাল থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত চায়নাতে দ্যা গ্রেট চাইনিজ ফ্যামিন(The Great Chinese Famine)নামক একটা অন্ধকারকাল দ্বারা আবৃত ছিল।এই টাইমে চায়নার ইকোনোমিতে এমন ধবস নামে যেটা থেকে ঘুরে দাড়ানোর মতো চায়না সরকারের সামর্থ্য ছিলনা। এই অকালসময়ে চায়নাতে প্রায় ৩কোটি ৬০ লাখ মানুষ অনাহারে মারা যায়।আর চায়না ভংগুর অবস্থায় চলে আসছিল৷আর ওই  টাইমে চায়নার যে কমিউনিস্ট গ্রুপ খাদ্যদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ কাজে যুক্ত ছিল তারাও ওই টাইমে দেশের বৃদ্ধিপাওয়া কাঙালের জন্য প্রায় ৯০ কোটি মানুষের খাদ্য যোগানে ব্যর্থ ছিল।আর ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত চায়নার ইকোনোমিক অবস্থা এতো খারাপ ছিল যে বাধ্য হয়ে চায়না সরকার ব্যক্তিগত প্রাণি ফার্মিং কে আইনিভাবে বৈধতা দেয়(প্রাইভেট ফার্মিং হচ্ছে কৃষক যে মাধ্যমে ক্ষেতের মধ্যে অনেক সংখ্যক প্রাণির পরিচর্যা ও লালন পালনকরে মাংস বা চামড়া যা ইচ্ছা বিক্রি করতে পারবে এবং ফার্মাররাও লাভমান হবে।)যার ফলে বড় বড় কম্পানিগুলো এই ফার্মারদের কাছ থেকে বেশ চাহিদা সম্পন্ন প্রানীর দ্রব্যাদি যেমনঃমুরগি,গোরু,শুকর উৎপাদন করা শুরু করলো।আর এটা ছিল বেশ ব্যায়বহুল। যার কারণে বেশির ভাগ মানুষ গরীব হওয়ায় তেমন কোনো সুবিধা পেলনা।আর এজন্যই তারা শুরু করলো ওয়াইল্ড ফার্মিং ইন্ডাস্ট্রি যার মানে হচ্ছে জংলি জন্তুতের ধরে এনে তা কেটে বিক্রি করা।আর এই ফার্মিং এর প্রাথমিক পর্যায় এর প্রাণি গুলো ছিল সাপ,বাদুড়,বিড়াল,কুকুর,কাক ইত্যাদি।কারণ এগুলো ধরাও সহজলভ্য ছিল,আর ক্ষুধার কারণে চাহিদা থাকাই যে মূল্যের বিনিময় বিক্রয় করতো তার পুরোটাই লাভ বা মুনাফা হতো,কারণ এদের নিবিড় পরিচর্যা করার তেমন দরকার ছিলনা।আর এই কারণেই গরীব মানুষগুলো খুব সহজভাবেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করতো।আর এই কারণেই মূলত চীনা সরকার এই ইন্ডাস্ট্রিকে বন্ধ করেনি কারণ সরকারের কথা-"যদি এই ওয়াইল্ড ফার্মিং ইন্ডাস্ট্রির কারণে আমার দেশের গরীব মানু্ষরা নিজের জীবিকা নির্বাহ করে নিজের এবং পরিবারের খরচ চালাতে পারে এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ করতে পারে তবে  এতে ক্ষতি কী।"চায়না সরকার এটাকে এতো বেশি সাপোর্ট করেছে যে ১৯৮৮ সালে "ওয়াইল্ড লাইফ প্রোটেকশন আইন"পাশ করে যেটার মূল কথা ছিল যে চায়নার প্রত্যেকটি বন্যপ্রাণি একেকটি ভোগ্যপণ্য,যেটার মালিক চায়না নিজেই আর এই ট্রেডিং সরকার দ্বারা সংরক্ষণ করা হবে এবং এই কৃষক গুলোকে সরকার নিজে রক্ষাকরার দায়ভার নিয়েছে।


তবে সরকার কর্তৃক এতো সুযোগ সুবিধা পাওয়ার পরেও এই ওয়াইল্ড লাইফ ফার্মিং ইন্ডাস্ট্রি কী এই ফার্মার গুলা কী বন্ধ করবেন?আপনারাই বিবেচনা করুন তো?


শেষ প্রশ্নটি এতো রোগ ছড়ালো ২০০২ পর্যন্ত তারপরও কেন ১৮ বছর পর করোনার কারণে সরকার এটা ব্যান করলো!আগে কেন করেনি?

=>এর উত্তরে বলবো২০০২ সালে SAARS(Severe Acute Respiratory Syndrome) আউটব্রেক করারপর ওয়াইল্ড লাইফ ফার্মিং আইনিভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল চীনা সরকার।এই ভাইরাসটি ফ্রোশেন শহরের ওয়েট মার্কেটে সিভিট ক্যাট নামক ভাইরাস থেকে ছড়িয়ে গিয়েছিল।এরপরই চীনা সরকার সব ওয়েট মার্কেট বন্ধ করে দেয়।বাট কিছু সময়ের জন্য,এই নিষেধাজ্ঞার তিন-চার মাস পর চায়না আবার এটার বৈধতা দেয়  ৫৪ প্রজাতির প্রাণির উৎপাদন এবং বিক্রিতে(এর ৫৪ প্রাণিএর মধ্যে সিভিট ক্যাট ও ছিল)।আর এই ওয়াইল্ড লাইফ ফার্মিং ট্রেডিং ইন্ডাস্ট্রি  অনেক ভালোভাবে ফর্মে আসলো(২০০৪ সাল পর্যন্ত এই ইন্ডাস্ট্রির ওর্থ ভ্যালু ছিল ১০০ বিলিয়ন চাইনিজ ইউয়ান)।এতো ভ্যালুর কারণে চায়না সরকার ফোর্সহয় এটা চালুরাখার কারণ আগেই বলেছি ইন্টার্নাল ইকোনমিকাল বেনেফিট সবার আগে দেখা হয়।আর এজন্য ফুল সাপোর্ট চীনা সরকার দিতে বাধ্য হচ্ছে।২০১৬ সালে বাঘ এবং প্যাংগুলিনের ব্যবসা ও ফার্মিং করাও সরকার লিগ্যাল করে দিয়েছে।আর এই প্রাণি গুলো থেকে বিভিন্ন পণ্য যেমনঃমাংস,চামড়া ইত্যাদি উৎপাদন করা শুরু করলো।আর এইসব পণ্যের দাম তুলনামূলক বেশি হওয়াতে ধনী লোকেরাই এটার ক্রেতা হচ্ছে,আর চায়না সরকার এই ধনীদের টাকার প্রতি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে মানুষের স্বাস্থ্যকে উপেক্ষা করে।তবে ২০১৯ সালে এই কভিড-19 আউটব্রেক করার পর সরকার আবার ওয়েট মার্কেট এবং বন্যপ্রাণির ফার্মিং ও বিক্রির উপর চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

তবে এই জারি কী আদৌ চিরস্থায়ী?এর আগেও কিন্তু চায়না এই কাজ করেছিল তবে পরিস্থিতি ঠান্ডা হওয়ার পর আবার তারা নিজের স্বার্থটিকেই দেখে।তবে এবারও কী করোনা সংকট চলে গেলে কী চায়না সরকার এই বন্যপ্রাণি ফার্মিংয়ের উপর আবার বৈধতা দিবে?তারা কী এইবারও নিজের স্বার্থটিকেই উপরে রাখবে?এই প্রশ্ন গুলো কিন্তু থেকে যায়।



2 comments: